প্রকাশিত: Thu, Apr 18, 2024 1:17 PM
আপডেট: Sun, May 19, 2024 5:36 AM

সন্ত্রাস দমনে রাজনীতিই উৎকৃষ্ট পন্থা

ইমতিয়াজ মাহমুদ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে আরেকটা ইস্যু হচ্ছে যে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে গুন্ডামি করে, একজন ছাত্রকে হত্যা করে ফেলেছে ওদের কর্মীরা। এই অজুহাত দেখিয়ে একদল বলছেন যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে রাখতে হবে। আমাকে যেটা বিস্মিত করেছে সেটা হচ্ছে যে একদল রাজনৈতিক কর্মীও আছেন এই দলে, যারা বলছেন যে ছাত্রলীগ যেহেতু গুন্ডামি করে। সুতরাং রাজনীতিই বন্ধ করে দাও। দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বিএনপির ছাত্রদল, ওরা তো আনুষ্ঠানিকভাবেই ছাত্রলীগবিরোধী ছাত্রদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে রাজনীতি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই যুক্তিটা তো একটা ছেদো যুক্তি আরকি। 

দেখেন, ছাত্র শিবিরের চেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন তো আর কোনো সংগঠন নেই। এই শিবিরের ছেলেরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখল করে ইচ্ছামতো ছেলেদের মারধোর করতো, হাতের পায়ের রোগ কেটে দিত এবং হত্যাও করতো তখনও আমরা কখনো দাবি করিনি যে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। কেন? কেননা আমরা জানতাম যে সন্ত্রাস দমনের জন্যে রাজনীতিই হচ্ছে উৎকৃষ্ট পন্থা। সন্ত্রাস দমন করার জন্যে সরকারের শক্ত অবস্থান দরকার আর সরকারের এই অবস্থান নিশ্চিত করার জন্যে প্রয়োজন রাজনৈতিক চাপ। মানুষের অধিকার খর্ব করে তো আর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

যেসব রাজনৈতিক কর্মী ছাত্রলীগের গুন্ডামিকে অজুহাত হিসাবে দেখিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে চান, সবিনয়ে বলি, আপনারা বোকামি করছেন। বোকামি বলছি নিতান্ত ভদ্রতা করে, আসলে আপনারা যেটা করছেন সেটা অন্যায় হিপোক্রেসি। আপনি নিজে রাজনীতি করছেন, আপনার সমর্থন রয়েছে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের প্রতি। আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে এসেছে ওদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার থাকবে না? কেন ভাই? আপনি যদি রাজনীতি করতে পারেন, তাইলে যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে তার কেন সেই অধিকার থাকবে না? ছাত্রলীগ বা শিবির গুন্ডামি করে, সেই দোষে অন্যদের আপনি কেন শাস্তি দিবেন? আরেকটা কথা ভুললে চলবে না। আপনি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিতে পারেন বটে, কিন্তু রাজনৈতিক মতামত গঠন ও প্রচার থেকে তো আর কাউকে বিরত রাখতে পারবেন না। 

আবরার নামে যে ছেলেটা নিহত হয়েছে, সে কি অরাজনৈতিক বা বিরাজনৈতিক কোনো ছাত্র ছিল। মোটেই না। ওর ফেসবুক ভর্তি ছিল তীব্র ভারত বিরোধী ও সরকার বিরোধী প্রচারণামূলক পোস্টে। সাথে ছিল ইসলামপন্থী নানারকম কথাবার্তা। তাকে আপনি অরাজনৈতিক বলবেন? না, এই জন্যে তাকে কেউ মারধোর করতে পারে না, বা হত্যা করতে পারে না। যারা হত্যা করেছে ওদের সাজা হওয়া তো দরকার। আবরারের উদাহরণটা দিচ্ছি এজন্যে যে একইরকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যারা করে যাচ্ছে ওদের এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো আপনি বন্ধ করতে পারবেন না। তাইলে ওদের বিরোধী যারা প্রকাশ্যে সংগঠন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, হোক সে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা ছাত্র ইউনিয়ন, ওদের রাজনীতি করার অধিকার আপনি খর্ব করবেন কেন? সারা দেশে প্রায় সকল ক্যাম্পাসে যে নৈরাজ্য ও অরাজকতা চলছে সেটা বন্ধ করার দাবি করবেন, ছাত্র রজানিতি বন্ধ করার দাবি কেন করবেন? 

না, যেসব রাজনৈতিক কর্মীরা রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে কথা বলছেন ওদের প্রতি খুব একটা সম্মান রাখতে পারছি না। নীতি বলে একটা কথা আছে। আপনি একেক ক্ষেত্রে একেক নীতির কথা বলতে পারেন না। আপনি বলবেন গণতন্ত্রের কথা আর বলবেন রাজনীতি বন্ধের কথা, সেটা কীরকম হয়ে গেলো না? আপনি বলবেন আপনার সংগঠন ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করবে আর ছাত্র সমাজকে বলবেন যে না, তোমাদের রাজনীতি করার দরকার নাই, কথাটা মিললো? এইগুলো তো ভন্ডামি হয়ে গেলো। 

যে আচরণ আপনি করবেন সে আচরণ অন্যের জন্যে নিষিদ্ধ করার কথা কোন মুখে বলেন? যারা নিজেরা রাজনীতি করছেন, কোন সংগঠনের সদস্য হয়ে বা এমনিই নানাভাবে কোন রাজনৈতিক মত ও পথের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে, আপনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ করার কথা বলার আগে নিজে তওবা করে রাজনীতি ছেড়ে নিন। নিজে রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। তারপর এসে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বা সাধারণভাবে সর্বত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলুন। নাইলে আপনি নিজেকে বারবার নিতান্ত ভণ্ড হিসাবেই চিহ্নিত করছেন। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে